Dhuliyan Milan Mandir Temple: ধূলিয়ান একটি ঐতিহাসিক শহর এই শহরে অবস্থিত রয়েছে সনাতন ধর্মের তীর্থস্থান ধূলিয়ান মিলন মন্দির। এই মন্দিরটি প্রতিবছর দুর্গাৎসবের সময় আলোক সজ্জায় সজ্জিত করে তোলা হয়। এক সময় এই মন্দিরের ছবি তোলা নিষিদ্ধ করা হয়ে ছিল। এই মন্দিরে রয়েছে বিশিষ্ট উন্নতমানের সব মার্বেল পাথর খোদায় করা মূর্তি। মন্দিরটি সকাল ৬ ঘটিকা থেকে দুপুর ১২.৩০ মিনিট পর্যন্ত খোলা থাকে এবং বিকেল ৪ ঘটিকা থেকে ৮.৩০ মিনিট পর্যন্ত খোলা থাকে। দুর্গাৎসবের পাশাপাশি অন্যান্য পূজো উৎসব গুলিতে মন্দির বন্ধ করার সময় বাড়ানো হয়। মন্দিরটি কত সালে স্থাপিত হয়েছিল এই মন্দিরের সমস্ত ইতিহাস জানতে পারবেন আজকের এই প্রতিবেদন থেকে।
আপনি যদি Dhuliyan Milan Mandir এর সমস্ত ইতিহাস জানতে আগ্রহী থাকেন, তবে নিশ্চয় আজকের এই প্রতিবেদনটি আপনার একটু মূল্যবান সময় দিয়ে পড়ুন। তাহলে আপনারা Dhuliyan Hindu Milan Mandir এর ইতিহাসের কথা গুলি সম্পর্কে জানতে পারবেন। খুব সহজ সরল শব্দে সবিস্তারে তুলে ধরা হয়েছে ধূলিয়ান মিলন মন্দিরের ইতি কথা।
আরও পড়ুন:- ধূলিয়ান শ্মশান ঘাটের ইতি কথা পড়ুন?
জমি ক্রয় ও দান (Dhuliyan Milan Mandir Temple)
ধূলিয়ান মিলন মন্দিরের জন্য ৭৮ শতক, ৪৭.১৯ কাঠা জমি কিনা হয়েছিল ১৯৮০ সালে। জমিটি রেজিস্ট্রি করা হয় ভারতসেবা সঙ্ঘ আশ্রম এর নামে। ৭৮ শতক জমিটি কিনে মন্দিরের নামে দান করেছিলেন ধূলিয়ানের বাসিন্দা বিজয় আগারওয়াল পিতা- নরেঙ্গলাল আগারওয়াল। বিজয় আগারওয়ালের বাড়িটি হলো মন্দিরের মেইন প্রবেশদ্বারের ঠিক অপজিটে। মন্দিরের মেইন প্রবেশদ্বার এবং বিজয় আগারওয়ালের বাড়ির মধ্যে রয়েছে ধূলিয়ান মেইন রোড। এই মেইন রোডের মিডিলে রয়েছে শ্রী শ্রী রক্ষা কালী মন্দির।
মন্দির নির্মাণ (Dhuliyan Milan Mandir Temple)
Dhuliyan Milan Mandir এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ১৯৯৫ সাল থেকে। মন্দিরটির প্রধান তিনটি চূড়া বিশিষ্ট ভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। এবং মন্দিরের দুই পাশে দুটি ছোটো আকারের চূড়া বিশিষ্ঠ কক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে। প্রধান তিনটি চূড়ার মধ্যে মধ্যের চূড়াটি বেশি উচ্চতা বাকি দুটো চূড়ার তুলনায়। মধ্যে থাকা চূড়ার সামনে নির্মাণ করা হয়েছে রথ। মন্দিরটির নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হয়েছিল ২০০৩ সালে। এই মন্দিরে পাঁচটি কক্ষ রয়েছে, মধ্য কক্ষে রাখা হয়েছে দূর্গা মাতার মূর্তি, বাম সাইডে রয়েছে কার্তিক ও সরস্বতী এবং ডান দিকে রয়েছে গনেশ ও লক্ষী মাতার মূর্তি।
ডান দিকের প্রধান কক্ষে সিঙ্গাসনে রাখা হয়েছে শিবের মূর্তি ও সেই রুমে রয়েছে শিবলিঙ্গ এর পাশাপাশি রয়েছে একাধিক দেবতার মূর্তি। ডান দিকের ছোটো কক্ষে রয়েছে বাবা গনেশের মূর্তি। এবং বাম দিকের প্রধান কক্ষে রাখা হয়েছে শ্রীকৃষ্ণ ও রাধার মূর্তি। এই কক্ষে রয়েছে কাঠের তৈরী শ্রী জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি। ঠিক এর পাশের ছোটো কক্ষটিতে রাখা হয়েছে মার্বেল পাথরের তৈরী করা বজরংবালির মূর্তি।
পাথরের মূর্তি স্থাপন (Dhuliyan Milan Mandir Temple)
২০০৩ সালে মন্দির নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পরে, তিন বার মাটির তৈরী দূর্গা প্রতিমার মূর্তি তৈরী করে পূজো করা হয়। এই মন্দিরে দূর্গা প্রতিমা ও অন্যান্য দেব দেবীর পাথরের মূর্তির স্থাপন করা হয়েছিল ২০০৬ সালের ৫মে। বিশেষ উন্নত জাতের মার্বেল পাথরকে খোদায় করে তৈরী করা হয়েছিল প্রতিমার মূর্তি গুলি। মূর্তি গুলি ভিন রাজ্য রাজস্থান থেকে ক্রয় করে আনা হয়েছিল। ধূলিয়ানে প্রথম মার্বেল পাথরের মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল এই ধূলিয়ান মিলন মন্দিরে।
কোন কোন সময় পূজো হয়
এই মন্দিরে প্রতিদিন দুইবার সকাল বেলায় ও সন্ধ্যা বেলায় পূজো করা হয়। সকালে মন্দির খোলার পরে প্রায় ১১ টার নাগাদ অন্নভোগের পূজো করা হয়। তারপর মন্দির দুপুরে বন্ধ করে দেওয়া হয়। দুপুরে মন্দির বন্ধ করে দেওয়ার পরে বিকেল ৪ ঘটিকায় পুনরায় মন্দির খোলা হয়। সন্ধ্যা সময় করা হয় সন্ধ্যা আরতি এই সময় ভক্তদের বেশ সমাগম হয় সন্ধ্যা আরতি দেখার জন্য।
অন্যান্য (Dhuliyan Milan Mandir Temple)
এই মন্দিরের মেইন গেটের ডান পাশে রয়েছে ভারতসেবা সঙ্ঘ আশ্রম তথা প্রণবানন্দ মহারাজ গুরুদেবের মন্দির। এই মন্দিরের ডান পাশে তৈরী করা হয়েছে একটি লাইব্রেরী এবং মন্দিরের সামনে রয়েছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। মন্দিরের মধ্যে অংশটা খোলামেলা রাখা হয়েছে ভক্তদের কথা মাথায় রেখে পূজোর সময় যাতে হুড়োহুড়ি করে অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। দুর্ঘটনা এড়াতে এই মন্দিরের চারিদিকে লাগানো হয়েছে সি সি টিভি ক্যামেরা।
মন্দিরের কিছুটা অংশ নিয়ে তৈরী করা হয়েছে জল ঝর্ণা। এই জল ঝর্ণাটি সব সময় খোলা না থাকলে ও দূর্গোৎসবের দিন গুলিতে খোলা হয়ে থাকে। মন্দিরের দুই দিকে বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগিয়ে তৈরী করা হয়েছে বাগান। এই গাছ গুলিকে প্রতিদিন দেখাশোনা ও পরিচর্চা করার জন্য রাখা হয়েছে একটি কর্মচারী। মন্দিরের খোলা অংশ গুলিতে টাইলেস বসিয়ে মন্দিরটিকে জাকজমক করে তোলা হয়েছে।
প্রধান মন্দিরটি বাগানের সমতল থেকে বেশ উঁচু করে তৈরী করা হয়েছে। কারন ১৯৯৮ সালে বন্যার প্লাবিত কারনে চারিদিক জল মগ্ন হয়ে গিয়েছিল। আবারো কখনো যদি বন্যা প্লাবিত পরিস্থিতি হলে ও যাতে মন্দিরের মেঝেতে বন্যার জন্য পৌঁছাতে না পারে। এই কথা মাথায় রেখে মন্দিরটিকে উঁচু ভাবে তৈরী করা হয়েছে।
যাতায়াত ব্যবস্থা (Dhuliyan Milan Mandir Temple)
যে সমস্ত দর্শনার্থীরা দূর দূর থেকে আসবেন ভাবছেন তারা কিভাবে পৌঁছাবেন এই মন্দিরে। রেলপথ এর মাধ্যমে আসতে চাইলে ধূলিয়ান গঙ্গা স্টেশনে নামতে হবে। এই ধূলিয়ান গঙ্গা স্টেশন থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটারের পথ। পায়ে হেটে ৪০ মিনিট সময় লাগবে মন্দিরে পৌঁছাতে, বাইকে করে গেলে সময় লাগবে ৮-১০ মিনিট, ব্যাটারি চালিত ই-রিক্সায় (টোটো) করে পৌঁছাতে সময় লাগবে ১৫-২০ মিনিট।
এছাড়াও যারা সড়কপথে বাসে আসতে চান তাদের নামতে হবে ধূলিয়ান ডাকবাংলা মোড়ে। এই ডাকবাংলা মোড় থেকে ধুলিয়ান মিলন মন্দিরের দূরত্ব ৩.১ কিলোমিটার। পায়ে হেঁটে মন্দিরে পৌঁছাতে সময় লাগবে ৪৫ মিনিট, অন্যদিকে বাইকে পৌঁছাতে সময় লাগবে ১০-১২ মিনিট, আবার কেউ যদি টোটোতে করে পৌঁছাতে চান সেক্ষেত্রে সময় লাগবে ১৫-২০ মিনিট।
এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে Dhuliyan Milan Mandir Temple এর ইতি কথা তুলে ধরতে পেরে ভীষণ খুশী। ধূলিয়ান মিলন মন্দির সম্পর্কিত অজানা তথ্য গুলি এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আপনাদের সামনে পেশ করা হয়েছে। আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ যদি পড়েন তবে নিশ্চয় আপনারা জানতে পারবেন মন্দিরের ইতি কথা সম্পর্কে। এই ধরনের নতুন নতুন আপডেট পেতে চোখ রাখুন gyanpix.com ওয়েবসাইটে। এছাড়াও আমাদের অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম গুলি ফলো করে রাখতে পারেন। সেখান থেকে ও আপনারা নতুন নতুন আপডেট পেতে থাকবেন। ধন্যবাদ।