Raksha Bandhan: ভারতীয়দের মধ্যে পালিত হওয়া রাখি বন্ধনকে কেন্দ্র করে রয়েছে নানান পৌরাণিক কাহিনী। এই রাখী বন্ধন উৎসবটি পালন করা হয় প্রতি বছর শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে। এই দিন বোন বা দিদিরা তাদের ভাই বা দাদাদের হাতের কব্জিতে একটি পবিত্র সুতো বেঁধে দেয়, এরপর একেঅপরকে মিষ্টি খাওয়ায় বোনেরা তাদের ভাইদের ভালোবাসা ও মঙ্গল কামনা করে এবং ভাই ও ঠিক বোনেদের যে কোনো বিপদ ও অশুভোর হাত থেকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেন। আপনারা কি জানেন কেন প্রতিবছর রাখী বন্ধন উৎসব পালন করা হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক আজকের প্রতিবেদন থেকে রাখীবন্ধনের কারন।
Raksha Bandhan অনুষ্ঠান পালন
প্রতিবছর শ্রাবণ মাসের রাখী পূর্ণিমার দিন বোনেরা তাদের ভাই দাদাদের হাতের কব্জিতে রাখী নামক পবিত্র সূতো বাঁধেন। এরপর বোন-ভাই পরস্পরকে মিষ্টি খাওয়ায়। রাখী বাঁধার পরিবর্তে ভাই বোনকে উপহার সরূপ কিছু দেয়। এবং ভাই সারাজীবন বোনের রক্ষার শপথ নেই। নিজের ভাই-বোন ছাড়া ও অনাত্মীয় ছেলেকে দাদা বা ভাই মনে করে রাখী পরানোর রেওয়াজ রয়েছে ভারতে।
পৌরাণিক Raksha Bandhan উৎসবের কথা
কৃষ্ণ ও দ্রৌপদী: সুভদ্রা ছিলেন কৃষ্ণের ছোটো বোন, সুভদ্রাকে কৃষ্ণ খুব ভালোবাসতেন। অন্যদিকে দ্রৌপদী আপন বোন না হওয়ার পরে ও দ্রৌপদী ছিলেন কৃষ্ণের অতীব স্নেহভাজন। একটি যুদ্ধের সময় শ্রীকৃষ্ণের হাতে আঘাত লেগে রক্তপাত শুরু হয়। দাদা কৃষ্ণের হাত থেকে রক্তপাত সুভদ্রা রক্তপাত বন্ধ কারার জন্য পাতলা কাপড় খুঁজছিলেন কিন্তু কোথাও পাচ্ছিলেননা। এই সময় দ্রৌপদী সেখানে উপস্থিত হয়ে দেখেন কৃষ্ণের হাতে আঘাত লেগে রক্ত ঝাড়ছে। এই দৃশ্য দেখে দ্রৌপদী এক মুহূর্ত দেরি না করে নিজের পরনের মূল্যবান শাড়ী ছিঁড়ে কৃষ্ণের হাতে বেঁধে দেন। তার কিছুক্ষন পরে কৃষ্ণের হাত থেকে রক্ত ঝড়া বন্ধ হয়।
তখন শ্রীকৃষ্ণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন দ্রৌপদীকে রক্ষা করার। একবার ধৃতরাষ্ট্রের দরবারে দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের সময় প্রতিশ্রুতি অনুসারে শ্রীকৃষ্ণ দ্রৌপদীর সন্মান রক্ষা করে। অনেকেই মনে করেন এই ঘটনার পর থেকেই রাখীবন্ধন প্রচলন শুরু হয়।
লক্ষ্মী ও বালিরাজা: অন্য একটি পৌরাণিক কাহিনীতে রয়েছে বিষ্ণুর পরম ভক্ত ছিলেন দৈত্যরাজা বলি। প্রিয় ভক্ত বলির রাজ্য রক্ষা করতে আসেন বৈকুন্ঠ ছেড়ে বিষ্ণু। লক্ষ্মী স্বামী বিষ্ণুকে ফায়ার পাওয়ার জন্য সাধারণ মেয়ের ছদ্মবেশে আসেন বলিরাজ্যে। বলি রাজার কাছে এসে ছদ্মবেশী লক্ষ্মী জানান তার স্বামী নিরুদ্দেশ। যতদিন আমার স্বামী দেশে ফায়ার না আসছে ততদিন আপনি আমায় আশ্রয় দিন। ছদ্মবেশী লক্ষ্মীর কথায় রাজী হয়ে বালিরাজা আশ্রয় দিতে রাজী হন।
শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে বলিরাজার হাতে লক্ষ্মী একটি পবিত্র সুতো বেঁধে দেন। লক্ষ্মীর কাছে বলিরাজা সূতো বাঁধার কারণ জানতে চাইলে লক্ষ্মী তার পরিচয় দিয়ে সব কথা খুলে বলেন। লক্ষ্মীর কথা শুনে বলিরাজা মুগ্ধ হয়ে বৈকুন্ঠে ফিরে যাওয়ার জন্য বিষ্ণুর কাছে অনুরোধ করেন বলি। বিষ্ণু ও লক্ষ্মীর জন্য সবর্স্ব ত্যাগ করে ছিলেন বলিরাজা। এই ঘটনার পার থেকেই প্রতিবছর শ্রাবন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে বোনেরা তাদের ভাইদের হাতে রাখী পরান।
সন্তোষী মা: রাখীবন্ধনের দিন মাতা অশোকা সুন্দরী দাদা গনেশের হাতের কব্জিতে একটি রাখী পাড়িয়ে দেন। বাবা গনেশের হাতে রাখী পড়ানোর দৃশ্য দেখে ছেলে শুভ ও লাভের মনে হিংসের জন্ম নেই। গনেশের কোনো কন্যা সন্তান ছিল না। শুভ ও লাভ দুজনেই বাবার কাছে একটা বোনের বায়না ধরে। গনেশ তার দুই ছেলের বায়না মিটানোর জন্য দিব্য শক্তি দিয়ে আগুন থেকে একটি কন্যার জন্য দেন। এই কন্যাই হলেন সন্তোষী মা গনেশের মেয়ে। এরপর শুভ ও লাভের হাতে রাখি বেঁধে দেন সন্তোষী মা।
আজকের এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে তুলেধরা হয়েছে Raksha Bandhan কেন প্রতিবছর পালন করা হয়। এর পাশাপাশি তুলে ধরা হয়েছে পৌরাণিক কাহিনী গুলি। আমরা আশাবাদী যে আজকের প্রতিবেদনটি আপনাদের অবশ্যই ভালো লেগেছে। ভালোলেগে ঠেকলে আপনার বন্ধু ও আত্মীয় স্বজনদের সাথে বেশি বেশি পরিমানে শেয়ার করে তাদের ও জানার সুযোগ করে দিন। এই ধরনের আপডেট পেতে চোখ রাখুন www.gyanpix.com ওয়েবসাইটে। আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের প্রতিবেদনটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।