HomeHISTORYShamshan Ghat Dhuliyan|ধূলিয়ান শ্মশান ঘাটের ইতি কথা জানুন?

Shamshan Ghat Dhuliyan|ধূলিয়ান শ্মশান ঘাটের ইতি কথা জানুন?

Shamshan Ghat Dhuliyan: ধূলিয়ান শশ্মান ঘাট পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলার ধূলিয়ান শহরে অবস্থিত একটি শ্মশান ঘাট। ধূলিয়ান শশ্মান এটি বহু পুরোনো শশ্মান দূর দূর থেকে সনাতন শাস্ত্রের মানুষ শবদাহ করার জন্য আসেন। এই শশ্মানের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে গঙ্গা নদী, গঙ্গা নদীর তীরে ধূলিয়ান শশ্মান ঘাট অবস্থিত। এই শ্মশান পাহাড়ঘাটি গ্রামের উত্তর দিকের শেষ প্রান্তে গঙ্গার তীরে নির্মিত হয় সত্তোর দশকে। অনেকেই এই শশ্মান ঘাট সম্পর্কে জানেনা। আজকের এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে সবিস্তারে তুলে ধরা হয়েছে ধূলিয়ান শশ্মান ঘাটের ইতি কথা। ধূলিয়ান শ্মশান ঘাটের ইতি কথা সম্পর্কে জানতে হলে প্রতিবেদনটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন। (Shamshan Ghat Dhuliyan)

Shamshan Ghat Dhuliyan
Shamshan Ghat Dhuliyan

শ্মশান কি (Shamshan Ghat Dhuliyan)

শ্মশান হল মৃত্যুদেহের শেষকৃত্য সম্পূর্ণ করার স্থান। সনাতন সমাজের কেউ মারা গেলে তার মৃতদেহ শ্মশানে এনে চিতায় দাহ করা হয়। শ্মশান গড়ে ওঠে সাধারণত শহর বা গ্রামের বড়ো জলাশয় কিংবা নদীর তীরে। অধিকাংশ শ্মশান গড়ে উঠে নদীর ঘাটের পাশে তাই চিহ্নিত করা হয় শ্মশান ঘাট নামে।

সংস্কৃত ভাষা অনুযায়ী শ্মশান শব্দের অর্থ হল- “শ্ম” শব্দের অর্থ- শব বা মৃতদেহ এবং “শান” কথার অর্থ হল- শন্য বা বিছানা। প্রধানত- সনাতন সমাজের মানুষেরা মৃত ব্যক্তির দেহ শ্মশানে ধর্মীয়ভাবে শেষকৃত্য সম্পূর্ণ করেন।

সনাতনী ধর্মীয় মতে মৃতদেহের শেষকৃত্য শ্মশানে দাহ করাকে মনে করা হয় পঞ্চতত্ব এর সাথে মিশে যাওয়া। যেমন- অগ্নি, বায়ু, জল, মাটি, ও আকাশ এই পাঁচটি তত্বে দেহ বিলীন হয়ে যায়।

সনাতন ধর্মের শবদাহ করার প্রথা (Shamshan Ghat Dhuliyan)

সনাতন ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী হরিনাম বলতে বলতে মৃতদেহের শেষকৃত্য করার জন্য শ্মশানে আনা হয়। শ্মশানের নিকটে বসবাসকারী ডোমের কাছ থেকে দক্ষিনার বিনিময়ে মুখাগ্নিকারীকে অগ্নি সংগ্রহ করে মুখাগ্নির কাজ সম্পূর্ণ করতে হয়।

শ্মশানে সাধারণত শবদাহ করা হয় কাঠ দিয়ে তৈরী করা চিতায়। বর্তমানে ভারতের বিভিন্ন শ্মশানে আধুনিক টেকনোলজিকে ব্যবহার করে গ্যাসের চুল্লি ও বৌদ্যুতিক চুল্লির সাহায্যে শবদাহ করা হয়।

সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাস্ত্রগ্রন্থে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে শ্মশানের জন্য স্থান নির্বাচনের জন্য। শ্মশানের জন্য স্থান নির্বাচন করা উচিত নদী বা বড়ো জলাশয়ের নিকটে। শ্মশান যে কোনো গ্রামের উত্তর দিকে হওয়া উচিত। তবে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিপাত থেকে কিছুটা দুরুত্বে আড়াল স্থানে হওয়া ভালো।

Shamshan Ghat Dhuliyan
Shamshan Ghat Dhuliyan

ধূলিয়ান শ্মশান ঘাটের ইতি কথা (Shamshan Ghat History of Dhuliyan)

Shamshan Ghat Dhuliyan গঙ্গা ভাঙনের কবলে পরে ধুলিয়ান শ্মশান এক সময় গঙ্গা নদীর সাথে বিলীন হয়ে যায়। এরপর নতুন করে ধূলিয়ান শ্মশানের পুনর্নির্মাণ করা হয়েছিল, পাহাড়ঘাটি গ্রামের শেষ প্রান্তের উত্তর দিকে গঙ্গা নদীর তীরে। পুনর্নির্মাণ ভাবে পাহাড়ঘাটি গ্রামে স্থাপিত করা হয়েছিল সত্তর দশকে। ধূলিয়ান শ্মশানটি পুনরায় তৈরী করা হয়েছিল তৎকালীন ধূলিয়ান পৌরসভার চেয়ারম্যান শ্রী সুধীর সাহা মহাশয়ের আমলে।

এই শ্মশান পুনরায় স্থাপন করার সময় শ্মশানের মধ্যে ছিল একটি বট গাছ। এই বট গাছের নিচে মা শ্মশান রক্ষা কালির জন্য তৈরী করা হয়ে ছিল একটি মন্দির। সেই সময় শ্মশানটি যাক জমক তেমন ছিলনা। তবে এই শ্মশানে দূর দূর থেকে শবদাহ করার জন্য মানুষ আসতেন। শ্মশানের মধ্যে সেই সময় কোনো চুল্লী ছিলোনা শবদাহ করার জন্য। তখন শবদাহ করতেন গঙ্গা নদীর তীরে প্রায় ছয় ফুট গর্ত করে লবন মাটি দিয়ে পুঁতে দিতেন। দেহটি যাতে তাড়াতাড়ি মাটির সাথে মিশে যায় তার জন্য ব্যবহার করা হতো লবন। আবার অনেকে সামান্য গর্ত করে মৃতদেহ টিকে পুড়িয়ে দিতেন। এবং অনেকে আবার মৃতদেহর সাথে বড়ো আকারের পাথর বেঁধে নৌকায় করে মাঝ গঙ্গায় গিয়ে ফেলে দিতেন। তখন এই রকম ভাবে মৃতদেহ শ্মশানে এনে তাঁর শেষকৃত্য কাজ সম্পূর্ণ করতেন।

এই শ্মশানের ভিতরে ছিল একটি অনাথগীরি আশ্রম এই আশ্রমটি সাধু সান্যাসীরাই তৈরী করেছিলেন। তারা সিদ্ধি লাভ করার জন্য এই আশ্রমের ভিতরে যজ্ঞ ও পূজো করতেন। এই আশ্রমে যজ্ঞ করার সময় তারা ব্যবহার করতেন শবদেহের মুণ্ড, এই আশ্রমের যজ্ঞের আগুন কোনো সময় নিভতোনা। একটি সময় সাধুদের ভুলভ্রান্তির কারনে অনাথগিরী আশ্রমটি বন্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকে সাধুরা Dhuliyan Shamshan ছেড়ে অন্যত্রে চলে যায়। এই শ্মশানে আর কোনো সাধু সন্যাসীদের দেখতে পাওয়া যায় না বলে জানান গ্রামবাসীরা।

সময়ের সাথে সাথে এই ধুলিয়ান শ্মশান ঘাটের ও পরিবর্তন ঘটতে থাকে। বর্তমানে ধূলিয়ান শ্মশানটি বেশ জম জমাট হয়ে উঠেছে। নতুন ভাবে নির্মাণ করা হয়েছে মা শ্মশান রক্ষা কালী মন্দির। এই নতুন মন্দিরে পাথরের খোদায় করে মায়ের মূর্তি তৈরী করে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এই শ্মশান ঘাটটি ধূলিয়ান মহাপ্রস্থান নামে পরিচিত।

বৈদ্যুতিক চুল্লী নির্মাণ

Dhuliyan Shamshan টিকে আরো উন্নত করে তোলার জন্য ধূলিয়ান পৌরসভার কর্মকর্তারা হাত বাড়িয়ে দেয়। ধুলিয়ান পৌরসভার উদ্যোগে ২০০৮ সালে বৈদ্যুতিক চুল্লী নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছিল। এই বৈদুতিক চুল্লীর সাহায্যে একটি মৃতদেহ পুড়াতে সময় লাগবে মোট ৪৫ মিনিট। বৈদ্যুতিক চুল্লীর নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ করতে সময় লেগেছিলো প্রায় দুই বছর। সেই সময় সামশেরগঞ্জ ব্লকের MLA ছিলেন তোয়াব আলী বিশ্বাস। তিনি ২০১০ সালে ২৮ ফেব্রুয়ারী বৈদ্যুতিক চুল্লীর উদ্বোধন করে ছিলেন।

বৈদ্যুতিক চুল্লীর পাশাপাশি আরো নতুন ভাবে দুটি কাঠের চুল্লী নির্মাণ করা হয়। যারা কাঠের চিতা সাজিয়ে মৃতদেহের শেষকৃত্য করতে চান তাদের জন্য এই কাঠের চুল্লীর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

শিব মূর্তি নির্মাণ (Shamshan Ghat Dhuliyan)

Dhuliyan Shamshan ঘাট প্রাঙ্গনে নির্মাণ করা হয়েছে একটি ২৫ ফুট উচ্চতার শিবের মূর্তি। এই মূর্তিটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালে। মূর্তিটির নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে ২০২৪ সালে। মূর্তিটি তৈরী করে ছিলেন ধূলিয়ানের বরুন দাস নামে একজন শিল্পী। ২৫ ফুট উচ্চতার বাবা ভোলানাথের এই মূর্তিটি আনুষ্ঠানিক ভাবে ৯ জুন ২০২৪ তারিখে উদ্বোধন করা হয়েছিল। মূর্তিটির উন্মোচন করে ছিলেন স্বামী প্রদীপ্তানন্দজি মহারাজ (কার্তিক মহারাজ)।

Shamshan Ghat Dhuliyan: আশা করছি এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আপনারা ধুলিয়ান শ্মশান ঘাটের ইতি কথা জানতে পেরে নিশ্চয় উপকৃত হবেন। ধূলিয়ান শ্মশান ঘাট সম্পর্কে আপনাদের আরো কিছু জানার থাকলে নীচের কমেন্ট বক্সে জানান। আপনার প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়ে আমরা আপনাদের সাহায্য করবো। এই প্রতিবেদনটি ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে বেশি বেশি পরিমানে শেয়ার করুন। এবং তাদের কেও ধুলিয়ান শ্মশান ঘাটের ইতিহাস সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দিন। এই ধরনের নতুন নতুন তথ্য পেতে চোখ রাখুন gyanpix.com ওয়েবসাইটের পেজে। আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আজকের এই পোষ্টটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments